• সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||
শিরোনাম

বরেন্দ্র অঞ্চলে খরায় ঝরে পড়ছে আম    

প্রকাশ:  ২১ এপ্রিল ২০২৪, ১৫:১৪
নিজস্ব প্রতিবেদক
ছবি: সংগৃহীত

সবুজ পাতায় ভরে আছে গাছ, কিন্তু আম নেই। গাছে গাছে আমের গুটির খরা। গাছে ছোট ছোট যে আম এসেছে তা-ও ঝরে পড়ছে তীব্র খরার কারণে।

আম উৎপাদনকারী বরেন্দ্র অঞ্চলের তিন জেলা রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং নওগাঁয় টানা খরায় আমচাষিদের কপালে এবার চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। চাষিরা বলছেন, বৈরি আবহাওয়ার কারণে এবার আমের উৎপাদন কম হবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. পলাশ সরকার বলেন, ‘এবার মুকুল থেকে যখন গুটি ধরছিল, তখন বৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে মুকুল নষ্ট হয়েছে। সেভাবে গুটি আসেনি। এখন তীব্র খরা চলছে। যেসব বাগানে সেচ দেওয়ার ব্যবস্থা আছে, সেগুলোর ক্ষতি কম হবে। কিন্তু যে বাগানগুলোয় সেচের ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না, সেগুলোর খুব ক্ষতি হচ্ছে। সামনে কালবৈশাখীর পূর্বাভাস আছে। উৎপাদন এবার কেমন হবে বলা যাচ্ছে না।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থেকে শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট হয়ে সোনামসজিদ পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার সড়কের দুইপাশে শুধুই আমবাগান। বড় বড় এক বাগান অন্যটার সঙ্গে মিলেমিশে একাকার। বাগানে বাগানে বিশাল বিশাল সব গাছ। কিন্তু গাছে আম তেমন নেই।

শিবগঞ্জ উপজেলার পুকুরিয়া গ্রামে বাগানে গাছের গোড়ায় পানি দিচ্ছিলেন তৌহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বাগান পাঁচ বছরের জন্য ইজারা নেওয়া। গত বছরের তুলনায় এবার অর্ধেক আমও আসেনি। সেই আমও ঝরে পড়ছে খরার কারণে। আম রক্ষা করতে গাছের গোড়ায় পানি দেওয়া হচ্ছে। কৃষি বিভাগ রোজ বিকালে পাতায় পানি স্প্রে করতে বলছে। কিন্তু এত বড় গাছে পানি স্প্রে করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ফলন এবার খুব কম হবে।’

কৃষি বিভাগের হিসাবে, চলতি মৌসুমে চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রায় ৩৭ হাজার ৬০৪ হেক্টর জমিতে আমবাগান আছে। ৪ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। আম উৎপাদনকারী আরেক জেলা নওগাঁয় এবার বাগান রয়েছে ৩০ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে। এখানে ৪ লাখ ৩১ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আর রাজশাহীর ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমির আমবাগান থেকে এবার ২ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন হবে বলে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা আশা করছেন।

তবে চাষিরা বলছেন শঙ্কার কথা। নওগাঁর সাপাহার উপজেলার নকচা গ্রামের আমচাষি সাইদুর রহমান বলেন, ‘গাছে এবার গতবারের তুলনায় অর্ধেক গুটিও আসেনি। এবার ফলন অনেক কম হবে। প্রচুর খরচ হয়েছে বাগান করতে। তাই এ বছর লোকসান হবে বলেই মনে হচ্ছে। তারপরও পরিচর্যা চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের জেলায় নতুন বাগান বলে গাছ ছোট। সহজে পরিচর্যা করা যাচ্ছে। গাছের গোড়ায় সেচ দেওয়ার পাশাপাশি বিকালে পাতায় পানি স্প্রে করা হচ্ছে। তারপরও আম ঝরে পড়া ঠেকানো যাচ্ছে না। সামনে কী হয় দেখা যাক!’

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার খাঁয়েরহাট গ্রামে এবার প্রথমবার সাত বিঘা জমির বাগান ইজারা নিয়েছেন জুলফিকার আলী। তাঁর বাগানে গিয়ে দেখা যায়, পুরনো পাতায় ঢেকে আছে গাছ, কিন্তু আম নেই। জুলফিকার বলেন, ‘গতবছরও প্রচুর আম হয়েছে। তাই দেখে এবার প্রথমবার বাগান নিয়েছি। পরিচর্যায় প্রচুর টাকা খরচও করেছি। কিন্তু মুকুল সেভাবে আসেনি। গাছে খুবই অল্প আমের কড়ালি এসেছে। সেটাও রোদে পুড়ে যাচ্ছে। ঝরে পড়ছে।’

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্যমতে, গত ১ এপ্রিল থেকেই রাজশাহীতে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছিল। গত বুধবার (১৭ এপ্রিল) থেকে রাজশাহীতে তীব্র তাপপ্রবাহ শুরু হয়। সেদিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) ছিল ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) বিকেল ৩টায় রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনিবার বেলা ৩টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা আরও বেড়ে ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ঠেকে। বৃষ্টির কোন সুখবর নেই। এখন কাঠফাটা ঠা ঠা রোদে ঝরছে আম। শঙ্কায় পড়েছেন চাষিরা।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা উম্মে সালমা বলেন, ‘আম খরা, বৃষ্টি, কালবৈশাখীর ভেতরেরই ফসল। গতবছর এই সময়ে তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছিল। তারপরও ভাল ফলন হয়। এবারও সমস্যা হবে না। কারণ, আমের বাণিজ্যিক চাষিরা অনেক সচেতন। তারা প্রচুর পরিশ্রম করছেন। আমরা পরামর্শ দিচ্ছি যেন প্রতিদিন বিকালে গাছের গোড়ায় সেচ দেওয়া হয় মালচিং পদ্ধতিতে। এ পদ্ধতিতে গাছের গোড়া থেকে একটু দূরে গোল করে নালা বানিয়ে খড়-কুটো ফেলে রাখতে হয়। এরপর সেচ দিলে মাটিতে রস থাকে। বিকালেও গাছের পাতায় পানি স্প্রে করে দিতে বলছি।’

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদও ফলন নিয়ে চিন্তা করছেন না। তিনি বলেন, ‘গুটি কম এসেছে তা ঠিক। কিছু গুটি খরার কারণে ঝরেও পড়ছে। তারপরও যে পরিমাণ গুটি আসে তার একভাগ টিকে থাকলেও পর্যাপ্ত আম পাওয়া যাবে। কারণ, সব গুটি তো টেকে না। প্রতিটি মুকুল থেকে দুটি-একটি করে আম পাওয়া গেলেও চলবে।’

ঝর,আম

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close